• ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আ.লীগ নেতা টুটুলের লাইসেন্সে ভারতে যাচ্ছে ইলিশ! সহযোগিতা করছেন বিএনপি নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ১৮:২১ অপরাহ্ণ
আ.লীগ নেতা টুটুলের লাইসেন্সে ভারতে যাচ্ছে ইলিশ! সহযোগিতা করছেন বিএনপি নেতারা
সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক : এক-দুটি নয়, ৪টি লাইসেন্সে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নিরব হোসেন টুটুল। ইতোমধ্যে তার লাইসেন্সে কলকাতায় গেছে প্রায় ২ হাজার কেজি ইলিশ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কলকাতায় পালিয়ে যান টুটুল। সেখান বসেই নিয়ন্ত্রণ করছেন বরিশালের পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামের ব্যবসা। এ কাজে তাকে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। বিনিময়ে তারা পাচ্ছেন নানা সুযোগ-সুবিধা। যদিও এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি ওইসব বিএনপি নেতা। আড়ত মালিক হিসাবে টুটুলের ব্যবসা চলছে আর এটা মোকামের নিয়ম বলে দাবি মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের বরিশাল মহানগর কমিটির সদস্য সচিব কামাল সিকদারের।

সাদিক আব্দুল্লাহর সময়ে বরিশালের দ্বিতীয় মেয়র হিসাবে পরিচিত টুটুল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক। শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পুত্র তৎকালীন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ডান হাত ছিলেন তিনি। অনেকে তাকে সাদিকের ক্যাশিয়ারও বলতেন। নগরীর হাট-ঘাট-বাজার-বাসস্ট্যান্ড সবকিছুই ছিল টুটুলের নিয়ন্ত্রণে। এসব স্থাপনার ইজারাদারি নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সাদিক আব্দুল্লাহর আয় বাণিজ্যের বিষয়গুলো দেখতেন তিনি। কুয়াকাটা ভ্রমণে গিয়ে সাদিকের পিস্তলের গুলিতে ডান পা হারানো টুটুলকে বরিশালে সবাই ডাকত টুটুল মামা নামে। পা হারানোর পর কিছুদিন ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলা টুটুল পরে লাগিয়ে নেন কৃত্রিম পা। এক পায়ের টুটুল তখন ছিল নগরীর আতঙ্ক। যার আয়ের প্রধান উৎস ছিল মাছের ব্যবসা। ছিলেন বরিশাল ইলিশ মোকামের অঘোষিত সম্রাট। মাছ বাজার আর বিআইডব্লিউটিএর ঘাটসহ পুরো এলাকার ইজারাদার ছিলেন তিনি। ইলিশসহ সব মাছের কেনা-বেচা চলত তার হুকুমে। দর পর্যন্ত ঠিক করতেন তিনি। বৈধ-অবৈধ উপায়ে এভাবে শত কোটি টাকার মালিক হওয়া টুটুলের বরিশালে রয়েছে ১০ তলা বাড়িসহ বিপুল ভূ-সম্পত্তি। কলকাতার জামাই এই আওয়ামী লীগ নেতার সেখানেও রয়েছে বাড়িসহ নানা স্থাপনা। ৫ আগস্টের পর ভারতে পালাতে গিয়ে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে ধরা পড়েন টুটুল। রহস্যজনক উপায়ে তখন ছাড়া পেয়ে চলে যান কলকাতায়। তারপর থেকে আছেন সেখানেই। কলকাতা থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন এখানকার ইলিশ মোকামের ব্যবসা। বরিশালে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে হয়েছে ৭টি মামলা।

এ বছর ভারতে ইলিশ রপ্তানির জন্য যে ৩৭ প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে সরকার, তার মধ্যে ৪টি টুটুলের। এগুলো হলো-মাহিমা এন্টারপ্রাইজ, তানিসা এন্টারপ্রাইজ, নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ এবং এআর এন্টারপ্রাইজ। মাহিমা ও তানিসা টুটুলের দুই মেয়ের নাম। কন্যাদের নামে এই দুটি লাইসেন্স করেন টুটুল। বাকি দুটি করেন তার ছোট মামা বাবর ও মামাতো ভাই আকাশের নামে। ২০১৯ সালে পূজার সময় বাংলাদেশ থেকে প্রথম ভারতে ইলিশ রপ্তানির যে অনুমতি দেয় সরকার, তখন থেকেই প্রতিবছর ইলিশ রপ্তানি করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে তার ৪টি প্রতিষ্ঠান।

শুধু অনুমতি পাওয়া নয়, ভারতে ইলিশ রপ্তানিও শুরু করেছে টুটুলের প্রতিষ্ঠান। বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কর্মকর্তা আকসাদুল ইসলাম জানান, ‘তানিসা এন্টারপ্রাইজ বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৩৬০ কেজি ইলিশ পাঠিয়েছে ভারতে।’ অন্য একটি সূত্র জানায়, বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই রপ্তানির আওতায় ২ দিনে প্রায় ২ হাজার কেজি ইলিশ ভারতে পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্য ৩টি লাইসেন্সে অবশ্য এখন পর্যন্ত মাছ যায়নি ভারতে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর একটি লাইসেন্সের বিপরীতে ২০ থেকে ৫০ টনের বেশি ইলিশ পাঠানো যাবে না। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ৪টি লাইসেন্সে রপ্তানির অনুমতি নিয়েছেন টুটুল। যাতে কম করে হলেও ২শ টন ইলিশ পাঠাতে পারেন তিনি। যার দাম পড়বে প্রায় ৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পোর্ট রোডে থাকা ইলিশ মোকামের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, টুটুলের পক্ষে মোকাম থেকে এই মাছ সংগ্রহ করছেন তারই লোকজন। হাসিনা সরকার পতনের পরও যারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ৫ আগস্টের আগের মতোই মোকামে আসা এলসি সাইজের (৬শ থেকে ৯শ গ্রাম) প্রায় সব ইলিশ কিনে নিচ্ছেন তারা। যেন এখনো চলছে টুটুলের রাজত্ব। শুধু রপ্তানি নয়, মাছের ব্যবসায় এখনো পোর্ট রোড মোকামে সবার উপরে টুটুল। ভারতে অবস্থান করেই চালাচ্ছেন ব্যবসা।

বেশ কয়েকজন আড়তদার বলেন, ‘বর্তমানে যারা মোকাম নিয়ন্ত্রণ করছেন তারাই মূলত টুটুলের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। রপ্তানি ব্যবসাও চলছে তাদের সহযোগিতায়। ৫ আগস্টের পর মোকামের সভাপতি-সম্পাদক পদে বসা দুজনই বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের নেতা। তারা চাইলে এখান থেকে উৎখাত কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিতে পারতেন টুটুলের। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা হয়নি।’ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কলকাতায় অবস্থানরত নিরব হোসেন টুটুলের ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মৎস্যজীবী দলের মহানগর সদস্য সচিব কামাল সিকদার বলেন, ‘এই মোকাম তো আমার একার নয়। এখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ সব দল আছে। আমি চাইলেই তো কারও ব্যবসা বন্ধ করতে পারি না। টুটুল নেই, কিন্তু তার লোকজন ব্যবসা চালাচ্ছে। এখানে আমার কি করার আছে? তাছাড়া ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে তো সরকার। আমি বাধা দেওয়ার কে।’

বি.দ্র: এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি। © জনতার বরিশাল