নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশাল-৫ (সদর) আসন ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে জমে উঠেছে নীরব প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই আসনে কে মনোনয়ন পাবেন, তা নিয়ে যেমন আলোচনায় সরব নেতাকর্মীরা, তেমনি চাপে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরাও।
এই আলোচিত আসনে সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ অন্তত ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তাঁদের কেউ প্রবীণ ও পরীক্ষিত, কেউ আবার অপেক্ষাকৃত তরুণ ও সংগঠনে সক্রিয়। দলের ভেতরের পরিবেশ বলছে, কেবল অতীত অভিজ্ঞতা নয়, বরং বর্তমানে ময়দানে কে কতটা সক্রিয় এবং তরুণদের কাছে কে কতটা গ্রহণযোগ্য—সেই হিসাবেই হবে এবার প্রার্থী নির্ধারণ।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চারবারের এমপি মজিবুর রহমান সরোয়ার এই আসনের সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্রার্থী। তবে বয়স ও স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় দল তাকে নিয়ে ‘সতর্ক চিন্তা’ করছে। সংগঠনের প্রতি তার আনুগত্য ও ঐতিহাসিক ভূমিকা অস্বীকারযোগ্য নয়, কিন্তু অনেকেই বলছেন, মাঠপর্যায়ে সক্রিয় ও তরুণমুখের প্রভাব এখন বেশি কার্যকর।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকাভিত্তিক রাজনীতিতে সুপরিচিত হলেও, বরিশাল কেন্দ্রিক ভোটের মাঠে তার অবস্থান কিছুটা দুর্বল বলে মনে করেন অনেকে। তিনি দলের আন্দোলনের সময় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন ঠিকই, তবে স্থানীয় সংযোগের ঘাটতি তাঁকে কিছুটা পিছিয়ে রাখছে।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ দীর্ঘদিন রাজধানী কেন্দ্রিক রাজনীতি করেছেন। বরিশালের স্থানীয় রাজনীতিতে গত কয়েক বছরে সক্রিয় হলেও তৃণমূল পর্যায়ে তিনি এখনো ততটা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। এই কারণে মনোনয়ন দৌড়ে তার পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে দলের অভ্যন্তরে।
নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য এবায়েদুল হক চান সংগঠনের কাজে সম্পৃক্ত থাকলেও বরিশাল সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র পদে নিজেকে প্রস্তুত করছেন। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তার অগ্রাধিকারে কতটা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক দলের নগর রাজনীতিতে পরিচিত নাম। তবে বর্তমানে তিনি মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় কতটা সক্রিয়, তা নিয়ে দলেই রয়েছে ভিন্নমত।
এই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় উঠে আসছেন জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে দীর্ঘদিনের রাজপথের অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ করে তৃণমূলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তাকে আলাদাভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। স্থানীয় রাজনীতির বাস্তবতা, তরুণ ভোটারদের সমর্থন এবং সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয়তার কারণে তাকে ঘিরে হাইকমান্ডে একধরনের ইতিবাচক আলোচনা চলছে।
এক স্থানীয় বিএনপি কর্মী বলেন,
“বয়স ও অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই, কিন্তু পরিস্থিতি এখন বদলে গেছে। সাধারণ মানুষ চাইছে এমন কাউকে, যার সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ আছে।”
বরিশালের ভোটার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক পূজা বৈদ্য মত দেন— “ভোটারের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক সরাসরি, এবং যারা আমাদের প্রজন্মের কথা বোঝেন—এই নির্বাচন তাদের ঘিরেই ঘুরবে।”
মনোনয়ন যাদের হাতে থাকবে, তাঁদের নাম এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে দলের ভেতরের গুঞ্জন বলছে, বরিশাল-৫ নিয়ে এবার হাইকমান্ড ‘মাঠে থাকা’কে সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনায় নিচ্ছে। যাকে তৃণমূল চায়, তাকেই ঘিরে ভাবনা এগোচ্ছে।